ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

‘মিডিয়ার সংস্কার প্রয়োজন গোড়া থেকে’

ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় : ১৪-১০-২০২৪ ১২:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৪-১০-২০২৪ ১২:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন
‘মিডিয়ার সংস্কার প্রয়োজন গোড়া থেকে’
মিডিয়ার গোড়া থেকে সংস্কার প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন গণমাধ্যমব্যক্তিত্বরা। মিডিয়া আইনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিশেষ করে মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সেন্সরশিপ এবং আর্থিক সমস্যাসহ মৌলিক সংস্কার ছাড়া গণমাধ্যম মিডিয়ার সংস্কার সম্ভব নয় বলে মত তাদের।

বিশেষ করে বিজ্ঞাপনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও তথ্য অধিকার আইনে তথ্য পাওয়ার বিষয়টি সহজ করতে হবে বলে বক্তারা বলেন।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর পান্থপথে ‘মানুষের পক্ষে ব্রডকাস্ট মিডিয়া’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এই আলোচনা করেন।

সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট এবং ইনোভেশন সেন্টার ফর রিসোর্স ডাইভার্সিটির (আইসিআরডি) সমন্বয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালন করেন আইসিআরডির প্রতিষ্ঠাতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা জীশান কিংশুক হক। সার্বিকভাবে সহায়তা করে ‘দ্য মার্ভেল- বি ইউ’ ও ‘সিথ্রিসিক্সটি বাংলাদেশ’।

শুরুতে মিডিয়া নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী উপস্থাপনা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম।

বৈঠকে টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ওটিটি এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসহ বাংলাদেশের সম্প্রচার ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া সেক্টরে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর দৃষ্টি আরোপ করেন অ্যাকাডেমিক বিশেষজ্ঞ, অ্যাকটিভিস্ট, মিডিয়া সাংবাদিক এবং প্রযোজক, বিজ্ঞাপনদাতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার, এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় পাঠশালার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আলম বলেন, ‘মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি আগেও ছিল এখনো আছে। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে আমরা তাকে গণমাধ্যম বলতে পারবো না।’

সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, ‘সরকারের তুলনায় বিজ্ঞাপন সংস্থা গণমাধ্যম বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে সংস্থাগুলো রেভিনিউ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে চ্যানেলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গণমাধ্যম ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এই মাফিয়াতন্ত্রের অবসান করতে হবে। এমনও আছে, সাংবাদিকরা নিজেরা ডিজিএফআইয়ের কাছে গিয়ে উপস্থিতি দিয়েছে।’

গোল টেবিল আলোচনায় বিজ্ঞাপন এজেন্সি ও সাংবাদিকদের দুর্নীতির বিষয়টাও উঠে আসে।

দেশে পে-চ্যানেলের নীতি বাস্তবায়নের প্রস্তাব রেখে চ্যানেল ২৪-এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যমের নিজস্ব আয়ের জায়গা নেই। আমরা সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক বিজনেস মডেলে না গেলে চ্যানেলগুলো স্বাবলম্বী কখনই হবে না।’

মিডিয়াকর্মী আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘চ্যানেলের প্রাপ্য আয় মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে একটা অবকাঠামো তৈরি প্রয়োজন। বহু প্রভাবশালী টেলিভিশনের মালিকেরা পে-চ্যানেলের নিয়মে যেতে চায় না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ‘মিডিয়া কার কাছে জবাবদিহি করবে সেটাও ভাবতে হবে। মালিকপক্ষের নীতিগত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত করবে কে, সেই প্রশ্নও তুলতে হবে। শ্রমিকপক্ষ, কর্মী ও মালিকপক্ষের মধ্যে ব্যবধান থাকলে আইন যতই করা হোক না কেন সেটা কাজে আসবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুতফা মিডিয়ার ‘ভ্যালু সিস্টেমের’ ওপর গবেষণার মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনার প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ নেক্সট থেকে মুনাফ মজিব চৌধুরী এবং প্রথম আলো ডিজিটাল হেড জাবেদ পিয়াস মিডিয়ার মালিকদের প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায়িক মডেলে বিনিয়োগের কথা বলেন।

দ্য ডেইলি স্টারের চিফ বিজনেস অফিসার তাজদিন হাসান বলেন, ‘সম্পাদকদের মেরুদণ্ড শক্ত হতে হবে। গণমাধ্যমে জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। মিডিয়ার একটা বড় বিনিয়োগ করতে হবে মার্কেট ডেভেলপমেন্টে।’

তবে মিডিয়ার জন্য যে তাদের কনটেন্ট সবচেয়ে শক্তিশালী, এইটা ছিল একটি মুখ্য আলোচনা। জীশান এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমান চ্যানেলগুলোতে আসলে বর্তমান প্রজন্ম নেই- তারা এইটা দেখে না, মিডিয়া তাদের বোঝে না।’

অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন ফাহিম মাশরুর, কনভেনর, ভয়েস ফর রিফর্মস, আব্দুন নূর তূষার, ডিরেক্টর, গতি মিডিয়া লিমিটেড, এ বি এম জাবেদ সুলতান, চীফ ডিজিটাল বিজনেস অফিসার, প্রথম আলো, মোহাম্মদ আলী হায়দার, হেড অব কন্টেন্ট, বঙ্গ বিডি, খ ম হারুন, প্রিন্সিপাল, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট, শুভাশীষ ভৌমিক, কান্ট্রি ডিরেক্টর, এটেক অস্ট্রেলিয়া, সৈয়দা সাদিয়া মেহজাবিন, উপদেষ্টা, ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসব, এন রাশেদ চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক, পাঠপালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট, শাহরিয়ার নাসির খান, ডিরেক্টর, রিসার্চ অ্যান্ড ক্লায়েন্ট সার্ভিসেস, সোমরা-এম বি এল লিমিটেড, মুনাফ মজিব চৌধুরী, ফাউন্ডার, একসাথে ফাউন্ডেশন, সাকিব আর খান, কান্ট্রি ডিরেক্টর, হইচই বাংলাদেশ, বৃতি সাবরিন, কো-ফাউণ্ডার, মার্ভেল বি ইউ এবং প্রমুখ।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Iqbal Hasan

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ